বৃহস্পতিবার, ২৫ জানুয়ারী, ২০১৮

গল্প বলা

 – সুকুমার রায়

“এক যে রাজা”–”থাম্ না দাদা,
রাজা নয় সে, রাজ পেয়াদা৷”
“তার যে মাতুল”–”মাতুল কি সে?—
সবাই জানে সে তার পিশে”
“তার ছিল এক ছাগল ছানা”—
“ছাগলের কি গজায় ডানা?”
“একদিন তার ছাতের ‘পরে”—
“ছাত কোথা হে টিনের ঘরে?”
“বাগানের এক উড়ে মালী”—
“মালী নয়তো! মেহের আলী৷”
“মনের সাধে গাইছে বেহাগ”—
“বেহাগ তো নয়! বসন্ত রাগ৷”

“থও না বাপু ঘ্যাঁচা ঘেঁচি”—
“আচ্ছা বল, চুপ করেছি৷”
“এমন সময় বিছনা ছেড়ে,
হঠাৎ মামা আস্‌ল তেড়ে,
ধর্‌ল সে তার ঝুঁটির গোড়া”—
“কোথায় ঝুঁটি? টাক যে ভরা৷”
“হোক না টেকো তোর তাতে কি?
লক্ষীছাড়া মুখ্যু ঢেঁকি!
ধর্‌ব ঠেসে টুঁটির ‘পরে,
পিটব তোমার মুণ্ড ধ’রে—
কথার উপর কেবল কথা,
এখন বাপু পালাও কোথা?”

রবিবার, ২১ জানুয়ারী, ২০১৮

Story of Happiness by One Taka Fund


আল আমিন খুব হাসিখুশি কর্মঠ ছেলে। আর্থিক অনটনের কারনে পড়াশুনা খুব বেশী করা হয়নি। তার বাবা জুতার দোকানে কাজ করে যে উপার্জন করে তা দিয়ে সংসার চলেনা। তাই পরিবারকে সহায়তা করতে আল আমিন সবজির দোকানে টুকটাক কাজ করে। সবজির দোকানের মালিক খুশি হয়ে যা দেয় তাই নিয়ে খুশি থাকে। সেই টাকার পরিমান টাও খুবই অল্প। ৫০/৬০ টাকা থেকে বড়জোর ৭০/৮০ টাকা, যা দিয়ে তার পরিবারের একবেলা আহার জুটানো ও কষ্টকর।  আল আমিনের বড় গুন সে কারো কাছে হাত পাতেনা, খেটে খায়। মনে মনে তারও মাঝে মাঝে হয়তো ইচ্ছা জেগেছে সেও যদি সবজি নিজে কিনে এনে বিক্রি করতে পারতো! কিন্তু তার জন্য যে টাকা প্রয়োজন (৮/১০হাজার) আল আমিনের মতো খেটে খাওয়া কারো জন্য আসলে দুঃস্বপ্নের কাছাকাছি।

১ টাকার ফান্ডের পক্ষ থেকে আল আমিনের মত(কর্মঠ) একজনকে সাহায্য করতে পেরে আমরা আনন্দিত। আল আমিনকে আমরা ১০ হাজার টাকা দিয়েছি যা দিয়ে সে গ্রাম থেকে পাইকারি দরে সবজি কিনে ভৈরবের গাছতলা ঘাট বাজারে সবজি বিক্রি করে প্রতিদিন ২৫০-৩০০ টাকা উপার্জন করতে পারছে আল আমিন নিজেই এখন সবজি বিক্রেতা । ১ টাকার ফান্ডের Story of Happiness হচ্ছে এটাই ।


আল আমিন যেহেতু দান নিতে চায়না তাই সে প্রতিদিন তার লাভের টাকা থেকে ১ টাকার ফান্ডে ৫০ টাকা করে ফেরত দিয়ে দিচ্ছে ১১ই ডিসেম্বর থেকে। এভাবে সে ২০০ দিন দিবে(১০০০০ টাকা পর্যন্ত) , এরপর থেকে আর ১ টাকাও দিতে হবেনা।

শুধু তাই নয়, আল আমিন ১ টাকার ফান্ডের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বরূপ নিজেও প্রতিদিন ১ টাকার ফান্ডে ৫ টাকা করে জমা দিচ্ছে অন্যকে সাহায্য করার জন্য। আল আমিন ১ টাকার ফান্ডের ১৫০তম সদস্য।

আর ১ টাকার ফান্ডের পক্ষ থেকে সেই ১০০০০ টাকা তুলে দিবো অন্য কোন আল আমিনের হাতে, নতুন কোন Story of Happiness এর শুরু করতে।

visit : onetakafund.blogspot.com
follow: facebook.com/onetakafund


https://onetakafund.blogspot.com/2017/12/blog-post_14.html

মঙ্গলবার, ১৬ জানুয়ারী, ২০১৮

সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড

-অ্যালেন গিন্সবার্গ

শত শত চোখ আকাশটা দেখে, শত শত শত মানুষের দল,
যশোর রোডের দুধারে বসত বাঁশের ছাউনি কাদামাটি জল।
কাদামাটি মাখা মানুষের দল, গাদাগাদি করে আকাশটা দেখে,
আকাশে বসত মরা ইশ্বর, নালিশ জানাবে ওরা বল কাকে।
ঘরহীন ওরা ঘুম নেই চোখে, যুদ্ধে ছিন্ন ঘর বাড়ী দেশ,
মাথার ভিতরে বোমারু বিমান, এই কালোরাত কবে হবে শেষ।
শত শত মুখ হায় একাত্তর যশোর রোড যে কত কথা বলে,
এত মরা মুখ আধমরা পায়ে পূর্ব বাংলা কোলকাতা চলে।
সময় চলেছে রাজপথ ধরে যশোর রোডেতে মানুষ মিছিল,
সেপ্টেম্বর হায় একাত্তর, গরুগাড়ী কাদা রাস্তা পিছিল
লক্ষ মানুষ ভাত চেয়ে মরে, লক্ষ মানুষ শোকে ভেসে যায়,
ঘরহীন ভাসে শত শত লোক লক্ষ জননী পাগলের প্রায়।
রিফিউজি ঘরে খিদে পাওয়া শিশু, পেটগুলো সব ফুলে ফেঁপে ওঠে
এইটুকু শিশু এতবড় চোখ দিশেহারা মা কারকাছে ছোটে।
সেপ্টেম্বর হায় একাত্তর, এত এত শুধু মানুষের মুখ,
যুদ্ধ মৃত্যু তবুও স্বপ্ন ফসলের মাঠ ফেলে আসা সুখ।
কারকাছে বলি ভাতরূটি কথা, কাকে বলি করো, করো করো ত্রান,
কাকে বলি, ওগো মৃত্যু থামাও, মরে যাওয়া বুকে এনে দাও প্রান।
কাঁদো কাঁদো তুমি মানুষের দল তোমার শরীর ক্ষত দিয়ে ঢাকা,
জননীর কোলে আধপেটা শিশু একেমন বাঁচা, বেঁচে মরে থাকা।
ছোটো ছোটো তুমি মানুষের দল, তোমার ঘরেও মৃত্যুর ছায়া,
গুলিতে ছিন্ন দেহ মন মাটি, ঘর ছেড়েছোতো মাটি মিছে মায়া।
সেপ্টেম্বর হায় একাত্তর, ঘর ভেঙে গেছে যুদ্ধের ঝড়ে,
যশোর রোডের দুধারে মানুষ এত এত লোক শুধু কেনো মরে।
শত শত চোখ আকাশটা দেখে, শত শত শত শিশু মরে গেল,
যশোর রোডের যুদ্ধ ক্ষেত্রে ছেঁড়া সংসার সব এলোমেলো
কাদামাটি মাখা মানুষের দল, গাদাগাদি করে আকাশটা দেখে,
আকাশে বসত মরা ইশ্বর, নালিশ জানাবে ওরা বল কাকে।
ঘরহীন ওরা ঘুম নেই চোখে, যুদ্ধে ছিন্ন ঘর বাড়ী দেশ,
মাথার ভিতরে বোমারু বিমান, এই কালোরাত কবে হবে শেষ।
শত শত মুখ হায় একাত্তর যশোর রোড যে কত কথা বলে,
এত মরা মুখ আধমরা পায়ে পূর্ব বাংলা কোলকাতা চলে,
এত মরা মুখ আধমরা পায়ে পূর্ব বাংলা কোলকাতা চলে॥

September on Jessore Road

অনুবাদ: খান মোহাম্মদ ফারাবী (১৯৫২-১৯৭৪)

বুধবার, ১০ জানুয়ারী, ২০১৮

কেউ বিশ্বাস করেনি আমাকে।



Aniket Rajesh

কেউ বিশ্বাস করেনি আমাকে।
ছোটবেলায় খেলতে ভালো লাগতো বলে
আগে আগে পড়া শেষ করে
মাঠে চলে যেতাম;
বাবা ভাবতেন পড়া ফাঁকি দিচ্ছি
অথচ ক্লাসে আমি বরাবরই প্রথম হতাম।
পাশের পাড়ার নিবারণ কাকা
সড়ক-দুর্ঘটনায় পঙ্গু বেশ ক’বছর।
মুক্তিযোদ্ধা নিবারণ কাকার মুখে তাঁর জীবনের
নানান স্মৃতিকথা শুনতে ভালো লাগতো খুব
তাই সুযোগ পেলেই তাঁর কাছে চলে যেতাম।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির বেশ কিছুদিন পর
প্রথম যেদিন বাড়ি গেলাম
কাকার জন্য তাঁরই হাতে নতুন কিছু
জামাকাপড়ের একটা প্যাকেট ধরিয়ে দেই।
সেই প্যাকেট না খুলেই কাকা বলেছিলেন
'রূপার জন্য আনলি বুঝি ? ঠিক আছে, রেখে যা।'
রূপা তাঁর কলেজ-পড়ুয়া মেয়ের নাম।
এর পর থেকে ওবাড়ি যাই নি কখনো।
হলের ডাইনিংয়ের কাজের ছেলেগুলির প্রতি
মায়া হতো খুব।
আমার ছাত্র পড়ানোর টাকা থেকে কিছুটা বাঁচিয়ে
সম্ভব হলে মাঝে-মধ্যে এটা-ওটা কিনে দিতাম;
ওদের আনন্দ দেখে কী যে ভালো লাগতো আমার!
বন্ধুরা ভাবতো ভালো খাওয়ার জন্য!
একদিন কমলাপুর স্টেশনে বেশ বয়স্ক এক ভদ্রলোক
খুব ভারী একটা ব্যাগ নিয়ে বেরুচ্ছিলেন,
আমার খালি হাত, আগ্রহ নিয়ে সাহায্য করতে গেলে
তিনি কেমন অবিশ্বাস নিয়ে তাকালেন !
কেউ বিশ্বাস করে নি আমাকে।
মানুষ ভালোবাসা বিশ্বাস করে না।
“মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারানো পাপ”
আমি পাপ পূণ্য বুঝি না,
সরল বিশ্বাস রাখি মানুষে।
মানুষের এতো অবিশ্বাস যে,
এটাও কেউ বিশ্বাস করে না।
এবার পূজোর ছুটিতে বাড়ি গিয়েছি জেনে
রূপা এসেছিলো আমাদের বাড়িতে
দেখা হতেই জিজ্ঞেস করলো
'তুমি বুঝি আমার উপর খুব রাগ করে আছো?'
বুঝলাম তিন বছর ধরে সে
এই প্রশ্নটি করার অপেক্ষায় ছিলো।
জবাবে আমি ‘না’ বলতেই সে বলেছিলো
'আমি বিশ্বাস করি না। তুমি মিথ্যে কথাটাও
ভালোভাবে বলতে শিখলে না !'
 
কেউ বিশ্বাস করেনি আমাকে।