শনিবার, ৩০ জানুয়ারী, ২০১৬

পৌষের কাছাকাছি

মান্না দে
পৌষের কাছাকাছি রোদমাখা সেইদিন
ফিরে আর আসবে কি কখনও
ফিরে আর আসবে কি কখনও
খুশি আর লজ্জার মাঝামাঝি সেই হাসি
তুমি আর হাসবে কি কখনও
তুমি আর হাসবে কি কখনও
অনুযোগ কার নাম না জেনে
অধরেতে কোন সাড়া না এলে
অনুযোগ কার নাম না জেনে
অধরেতে কোন সাড়া না এলে
দেখা আর না দেখার কাছাকাছি কোন রঙ
চোখে আর ভাসবে কি কখনও
চোখে আর ভাসবে কি কখনও
কাব্য কি কথা সে ভাবব কি বিলাসে
মায়াজাল বুনবো কি তখনও
দুএকটি পাখিদের সে কাকলী শুনবো কি তখনও
সে বাতাস বাঁশি কিগো বাজাবে
সে আবেশ মনে মনে সাজাবে
বোঝা আর না বোঝার কাছাকাছি কোন গান
ভাল আর বাসবে কি কখনও
ভাল আর বাসবে কি কখনও

pousher kasakasi by Manna Dey

হুমায়ুন আহমেদ এর উক্তি




মা হল পৃথিবীর একমাত্র ব্যাংক, যেখানে আমরা আমাদের সব দুঃখ, কষ্ট জমা রাখি এবং বিনিময়ে নেই বিনাসূদে অকৃত্রিম ভালোবাসা



“ হাসি সবসময় সুখের কারণ বুঝায় না মাঝে মাঝে এটা ও বুঝায় যে আপনি কতটা বেদনা লুকাতে পারেন ”



“ অপেক্ষা হলো শুদ্ধতম ভালোবাসার একটি চিহ্ন। সবাই ভালোবাসি বলতে পারে। কিন্তু সবাই অপেক্ষা করে সেই ভালোবাসা প্রমাণ করতে পারে না। ”




বাবা-মা’র প্রথম সন্তান হচ্ছে চমৎকার একটি জীবন্ত খেলনা। এই খেলনার সবই ভালো। খেলনা যখন হাসে,
বাবা-মা হাসে। খেলনা যখন কাঁদে বাবা-মা’র মুখ অন্ধকার হয়ে যায়।

যত্ন করে কাঁদানোর জন্য খুব আপন মানুষগুলোই যথেষ্ট!




প্রতিটা মেয়ে হয়ত তার স্বামীর কাছে রানী হয়ে থাকতে পারে না। কিন্তু প্রতিটা মেয়েই তার বাবার কাছে রাজকন্যা হয়ে থাকে



“ এই পৃথিবীতে প্রায় সবাই, তার থেকে বিপরীত স্বভাবের মানুষের সাথে প্রেমে পড়ে ”



“ পৃথিবীতে অনেক ধরনের অত্যাচার আছে। ভালবাসার অত্যাচার হচ্ছে সবচেয়ে ভয়ানক অত্যাচার। এ অত্যাচারের বিরুদ্ধে কখনো কিছু বলা যায় না, শুধু সহ্য করে নিতে হয়। ”



“ কিছু কিছু মানুষ সত্যি খুব অসহায়। তাদের ভালোলাগা মন্দলাগা, ব্যথা বেদনা গুলো বলার মত কেউ থাকে না। তাদের কিছু অবাক্ত কথা মনের গভীরেই রয়ে যায়, আর কিছু কিছু স্মৃতি - এক সময় পরিনত হয় দীর্ঘ শ্বাসে। ”


“ মাঝে মাঝে আত্মার সম্পর্ক রক্তের সম্পর্ককেও অতিক্রম করে যায়! ”


“ বাস্তবতা এতই কঠিন যে কখনও কখনও বুকের ভিতর গড়ে তোলা বিন্দু বিন্দু ভালবাসাও অসহায় হয়ে পড়ে। ”



জীবনে কিছু কিছু প্রশ্ন থাকে যার উত্তর কখনও মিলেনা, কিছু কিছু ভুল থাকে যা শোধরানো যায়না, আর কিছু কিছু কষ্ট থাকে যা কাউকে বলা যায়না

















শুক্রবার, ২৯ জানুয়ারী, ২০১৬

চট্টগ্রাম ভার্সিটির ফ্ল্যাশ মব নিয়ে হিটলারের প্রতিক্রিয়া

কত ভালবাসি


                   - -  কামিনী রায়

জড়ায়ে মায়ের গলা শিশু কহে আসি,-
“মা, তোমারে কত ভালোবাসি!”
“কত ভালবাস ধন?” জননী শুধায়।
“এ-ত।” বলি দুই হাত প্রসারি’ দেখায়।

“তুমি মা আমারে ভালবাস কতখানি?”
মা বলেন “মাপ তার আমি নাহি জানি।”
“তবু কতখানি, বল।”

“যতখানি ধরে
তোমার মায়ের বুকে।”
“নহে তার পরে?”

“তার বাড়া ভালবাসা পারি না বাসিতে।”
“আমি পারি।” বলে শিশু হাসিতে হাসিতে!

মনে-পড়া



                       -  রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
মাকে আমার পড়ে না মনে।
শুধু কখন খেলতে গিয়ে হঠাৎ অকারণে
একটা কি সুর গুনগুনিয়ে কানে আমার বাজে,
মায়ের কথা মিলায় যেন আমার খেলার মাঝে।
মা বুঝি গান গাইত আমার দোলনা ঠেলে ঠেলে-
মা গিয়েছে, যেতে যেতে গানটি গেছে ফেলে।
মাকে আমার পড়েনা মনে।
শুধু যখন আশ্বিনেতে ভোরে শিউলিবনে
শিশির-ভেজা হাওয়া বেয়ে ফুলের গন্ধ আসে
তখন কেন মায়ের কথা আমার মনে ভাসে।
কবে বুঝি আনত মা সেই ফুলের সাজি বয়ে-
পূজোর গন্ধ আসে যে তাই মায়ের গন্ধ হয়ে।
মাকে আমার পড়ে না মনে।
শুধু যখন বসি গিয়ে শোবার ঘরের কোণে,
জানলা থেকে তাকাই দূরে নীল আকাশের দিকে-
মনে হয় মা আমার পানে চাইছে অনিমিখে।
কোলের পরে ধরে কবে দেখত আমায় চেয়ে,
সেই চাউনি রেখে গেছে সারা আকাশ ছেয়ে।

সোমবার, ২৫ জানুয়ারী, ২০১৬



কুহু সুরে মনের আগুন

আমার কি সুখে যায় দিন রজনী, কেউ জানে না
কুহু সুরে মনের আগুন আর জ্বালাইও না
ও আমার প্রান বন্ধুয়ার তুলনা নাই
বলিরে তোরে
দেশ বিদেশে থাকো কোকিল
চিনোনি তারে
সে আমার হৃদয়ের ধন
সে ছাড়া অসহায় হইয়া
জুড়ে দু নয়ন
কুকিল যারে চাহে মন
একা একা, একা একা থাকা আমার ভালো লাগেনা
কুহু সুরে মনের আগুন আর জ্বালাইও না
আমার কি সুখে যায় দিন রজনী, কেউ জানে না
কি সুখে যায় দিন রজনী, কেউ জানে না
কুহু সুরে মনের আগুন আর জ্বালাইও না
কুহু সুরে মনের আগুন আর জ্বালাইও না
বুকে জ্বলে ধিকি ধিকি পিরিতের অনল
সপ্ত সাগরের জ্বলেও হবেনা শীতল।।
ওই যে বসন্ত ফাগুন কুকিলের কুহু সুরে
বুকে ধরে ঘুন
বন্ধু হইলো নিদারুন
আসিবে বলিয়ে গেলো ফিরে এলো না।।
কুহু সুরে মনের আগুন আর জ্বালাইও না
মনের মানুষ বিনে আমি কেমনে রই একা
ধরিয়া বান্ধিয়া যৌবন যায়নিরে রাখা।।
কুকিল আমার উপায় বল
প্রাণ বন্ধুয়ার খবর জানলে
আমায় নিয়া চল
আমি যার নামের পাগল
আমিরুউদ্দিন শুধু মাত্র বন্ধুর দিওয়ানা।।
কুহু সুরে মনের আগুন আর জ্বালাইও না
আমার কি সুখে যায় দিন রজনী, কেউ জানে না
কি সুখে যায় দিন রজনী, কেউ জানে না
কুহু সুরে মনের আগুন আর জ্বালাইও না
কুহু সুরে মনের আগুন আর জ্বালাইও না

রবিবার, ২৪ জানুয়ারী, ২০১৬

বিষম চিন্তা


– সুকুমার রায়



মাথায় কত প্রশ্ন আসে, দিচ্ছে না কেউ জবাব তার-

সবাই বলে, মিথ্যে বাজে বকিস্নে আর খবরদার!

অমন ধারা ধমক দিলে কেমন করে শিখব সব?

বলবে সবাই মুখ্য ছেলে, বলবে আমায় “গো গর্দভ!”

কেউ কি জানে দিনের বেলায় কোথায় পালায় ঘুমের ঘোর?

বর্ষা হলেই ব্যাঙের গলায় কোথেকে হয় এমন জোর?

গাধার কেন শিং থাকে না, হাতির কেন পালক নেই?

গরম তোলে ফোড়ন দিলে লাফায় কেন তা ধেই ধেই

সোডার বোতল খুললে কেন ফঁসফঁসিয়ে রাগ করে?

কেমন করে রাখবে টিকি মাথায় যাদের টাক পড়ে?

ভুত যদি না থাকবে তবে কোত্থেকে হয় ভূতের ভয়?

মাথায় যাদের গোল বেধেছে তাদের কেন “পাগোল” কয়?

কতই ভাবি এসব কথা, জবাব দেবার মানুষ কই?

বয়স হলে কেতাব খুলে জানতে পাব সমস্তই।

এমন একটা মা দেনা।


যে মায়ের সন্তানেরা
কান্দে আবার হাসতে জানে।।
মা তুই থাকলে কত ভাল লাগে
সারা জীবন কোন কিছু আর লাগে না।
এমন মা হবি তুই
যে মায়ের সন্তানেরা
কান্দে আবার হাসতে জানে।
সূর্য ডুবে গেলে রাত নেমে আসে
আমার জীবন তুই থাকলে কিছু হবে না।
এমন মা হবি তুই
যে মায়ের সন্তানেরা
কান্দে আবার হাসতে জানে।।

সাহেব ও মোসাহেব


– কাজী নজরুল ইসলাম

সাহেব কহেন, “চমৎকার ! সে চমৎকার !”
মোসাহেব বলে, “চমৎকার সে হতেই হবে যে !
হুজুরের মতে অমত কার ?”
সাহেব কহেন, “কী চমৎকার,
বলতেই দাও, আহা হা।”
মোসাহেব বলে, “হুজুরের কথা
শুনেই বুঝেছি, বাহাহা বাহাহা বাহাহা !”
সাহেব কহেন, ”কথাটা কি জান ? সেদিন– ?
মোসাহেব বলে, “জানি না আবার ?
ঐ যে, কি বলে, যেদিন–”
সাহেব কহেন, ”যেদিন বিকেলে বৃষ্টিটা ছিল স্বল্প।”
মোসাহেব বলে, “আহা হা, শুনেছ ?
কিবা অপরূপ গল্প !”

সাহেব কহেন ”আরে ম’লো ! আগে
বলতেই দাও গোড়াটা !
মোসাহেব বলে, “আহা-হা গোড়াটা !
হুজুরের গোড়া ! এই, চুপ, চুপ ছোঁড়াটা !”

সাহেব কহেন, ”কি বলছিলাম,
গোলমালে গেল গুলায়ে !”
মোসাহেব বলে, “হুজুরের মাথা ! গুলাতেই হবে !
দিব কি হস্ত বুলায়ে !”
সাহেব কহেন, “শোনো না। সেদিন
সূর্য উঠেছে সকালে !”
মোসাহেব বলে, “সকালে সূর্য ?
আমরা কিন্তু দেখি না কাঁদিলে কোঁকালে !”

সাহেব কহেন, “ভাবিলাম, যাই,
আসি খানিকটা বেড়ায়ে,”
মোসাহেব বলে, “অমন সকাল ! যাবে কোথা বাবা,
হুজুরের চোখ এড়ায়ে !”
সাহেব কহেন, “হ’ল না বেড়ানো,
ঘরেই রহিনু বসিয়া !”
মোসাহেব বলে, “আগেই বলেছি ! হুজুর কি চাষা,’
বেড়াবেন হাল চষিয়া ?”

সাহেব কহেন, “বসিয়া বসিয়া
পড়েছি কখন ঝিমায়ে !”
মোসাহেব বলে, “এই চুপ সব !
হুজুর ঝিমান ! পাখা কর্, ডাক্ নিমাইএ !”
সাহেব কহেন, “ঝিমাইনি, কই
এই ত জেগেই রয়েছি।”
মোসাহেব বলে, “হুজুর জেগেই রয়েছেন, তা
আগেই সবারে কয়েছি !”
সাহেব কহেন, “জাগিয়া দেখিনু, জুটিয়াছে যত
হনুমান আর অপদেব !”
“হুজুরের চোখ, যাবে কোথা বাবা ?”
প্রণমিয়া কয় মোসাহেব।।

জননী জন্মভূমি


                 সুভাষ মুখোপাধ্যায়

আমি ভীষণ ভালবাসতাম আমার মা-কে

-কখনও মুখ ফুটে বলি নি।

টিফিনের পয়সা বাঁচিয়ে

কখনও কখনও কিনে আনতাম কমলালেবু

-শুয়ে শুয়ে মা-র চোখ জলে ভ’রে উঠত

আমার ভালাবাসার কথা

মা-কে কখনও আমি মুখ ফুটে বলতে পারি নি।

হে দেশ, হে আমার জননী-

কেমন ক’রে তোমাকে আমি বলি...

মা



কাজী নজরুল ইসলাম

 যেখানেতে দেখি যাহা
মা-এর মতন আহা
একটি কথায় এত সুধা মেশা নাই,
মায়ের মতন এত
আদর সোহাগ সে তো
আর কোনখানে কেহ পাইবে ভাই!

হেরিলে মায়ের মুখ
দূরে যায় সব দুখ,
মায়ের কোলেতে শুয়ে জুড়ায় পরান,
মায়ের শীতল কোলে
সকল যাতনা ভোলে
কত না সোহাগে মাতা বুকটি ভরান।

কত করি উৎপাত
আবদার দিন রাত,
সব স’ন হাসি মুখে, ওরে সে যে মা!
আমাদের মুখ চেয়ে
নিজে র’ন নাহি খেয়ে,
শত দোষী তবু মা তো তাজে না।

ছিনু খোকা এতটুকু,
একটুতে ছোট বুক
যখন ভাঙিয়া যেতো, মা-ই সে তখন
বুকে করে নিশিদিন
আরাম-বিরাম-হীন
দোলা দেয় শুধাতেন, ‘কি হোলো খোকন?’

আহা সে কতই রাতি
শিয়রে জ্বালায়ে বাতি
একটু আসুখ হলে জাগেন মাতা,
সব-কিছু ভুলে গিয়ে
কেবল আমায়ের নিয়ে
কত আকুলতা যেন জাগন্মাতা।

যখন জন্ম নিনু
কত আসহায় ছিনু,
কাঁদা ছাড়া নাহি জানিতাম কোন কিছু,
ওঠা বসা দূরে থাক-
মুখে নাহি ছিল বাক,
চাহনি ফিরিত শুধু আর পিছু পিছু।

তখন সে মা আমার
চুমু খেয়ে বারবার
চাপিতেন বুকে, শুধু একটি চাওয়ায়
বুঝিয়া নিতেন যত
আমার কি ব্যথা হোতো,
বল কে ওমন স্নেহে বুকটি ছাওয়ায়।

তারপর কত দুখে
আমারে ধরিয়া বুকে
করিয়া তুলেছে মাতা দেখো কত বড়,
কত না সে সুন্দর
এ দেহে এ অন্তর
সব মোর ভাই বোন হেথা যত পড়।

পাঠশালা হ’তে যবে
ঘরে ফিরি যাব সবে,
কত না আদরে কোলে তুলি’ নেবে মাতা,
খাবার ধরিয়া মুখে
শুধাবেন কত সুখে
কত আজ লেখা হোলো, পড়া কত পাতা?’

পড়া লেখা ভাল হ’লে
দেখেছ সে কত ছলে
ঘরে ঘরে মা আমার কত নাম করে।
বলে, ‘মোর খোকামনি!
হীরা-মানিকের খনি,
এমনটি নাই কারো!’ শুনে বুক ভরে।

গা’টি গরম হলে
মা সে চোখের জলে
ভেসে বলে, ‘ওরে যাদু কি হয়েছে বল’।
কত দেবতার ‘থানে’
পীরে মা মানত মানে-
মাতা ছাড়া নাই কারো চোখে এত জল।

যখন ঘুমায়ে থাকি
জাগে রে কাহার আঁখি
আমার শিয়রে, আহা কিসে হবে ঘুম।
তাই কত ছড়া গানে
ঘুম-পাড়ানীরে আনে,
বলে, ‘ঘুম! দিয়ে যা রে খুকু-চোখে চুম’।

দিবানিশি ভাবনা
কিসে ক্লেশ পাব না,
কিসে সে মানুষ হব, বড় হব কিসে;
বুক ভ’রে ওঠে মা’র
ছেলেরি গরবে তাঁর,
সব দুখ হয় মায়ের আশিসে।

আয় তবে ভাই বোন,
আয় সবে আয় শোন
গাই গান, পদধূলি শিরে লয়ে মা’র;
মা’র বড় কেহ নাই-
কেউ নাই কেউ নাই!
নত করি বল সবে ‘মা আমার! মা আমার!