সুফিয়া কামাল লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
সুফিয়া কামাল লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০২০

পল্লী স্মৃতি


সুফিয়া কামাল


বহুদিন পরে মনে পড়ে আজি পল্লি মায়ের কোল,
ঝাউশাখে সেথা বনলতা বাঁধি হরষে খেয়েছি দোল ।
কুলের কাটার আঘাত সহিয়া কাচা-পাকা কুল খেয়ে
আরও উল্লাশ বাড়িয়াছে মনে মায়ের বকুনি পেয়ে।
চৈত্র নিশি চাদিমায় বসে শুনিয়াছি রুপকথা,
মনে জাগিয়াছে সুয়ো দুয়োরানি দুখিনি মায়ের ব্যাথা।
তবু বলিয়াছি মার গলা ধরে, মাগো সেই কথা বল
রাজার দুলালে পাষান করিতে ডাইনি করে কি ছল।
সাতশো সাপের পাহারা কাটায়ে পাতালবাসীনী মেয়ে
রাজার ছেলেরে বাঁচায়ে কি করে পৌঁছিল দেশে যেয়ে।
কল্পপুরীর স্বপ্নের কাঠি বুলাইয়া শিশু চোখে,
তন্দ্রা দোলায় লয়ে যেত মোরে কোথা দূর ঘুমলোকে ।
ঘুম থেকে জেগে বৈশাখী ঝড়ে কুড়ায়েছি ঝরা আম,
খেলার সাথীরা কোথা আজ তারা ভুলিয়াও গেছি নাম ।
শিশির সিক্ত শেফালী ফুলের ঘন সৌরভে মাতি,
শরৎ প্রভাতে সখীগণ সাথে আনিয়াছি মালা গাঁথি ।
নব বর্ষার জলে অবগাহি কভু পুলকিত মনে
গান গাহিয়াছি মল্লার রাগে বাদলের ধারা সনে ।
................. ...খোলার মোচার তরী
কাঁদিয়া ফিরেছি সাঁঝের বেলায় পুতুলে বিদায় করি ।
আগামী দিনের আশা ভরসা কত না মধুর ছবি,
জাগিয়া উঠেছে চোখের পাতায় ডুবেছে যখন রবি ।

polli srity

সোমবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৫

প্রার্থনা


সুফিয়া কামাল

তুলি দুই হাত করি মোনাজাত
হে রহিম রহমান
কত সুন্দর করিয়া ধরণী
মোদের করেছ দান,

গাছে ফুল ফল
নদী ভরা জল
পাখির কণ্ঠে গান
সকলি তোমার দান।

মাতা, পিতা, ভাই, বোন ও স্বজন
সব মানুষেরা সবাই আপন
কত মমতায় মধুর করিয়া
ভরিয়া দিয়াছ প্রাণ।

তাই যেন মোরা তোমারে না ভুলি
সরল সহজ সৎ পথে চলি
কত ভাল তুমি, কত ভালবাস
গেয়ে যাই এই গান।

ছোটন ঘুমায়

সুফিয়া কামাল

গোল করো না গোল করো না
ছোটন ঘুমায় খাটে।
এই ঘুমকে কিনেত হল
নওয়াব বাড়ির হাটে।
সোনা নয় রুপা নয়
দিলাম মোতির মালা
তাইতো ছোটন ঘুমিয়ে আছে
ঘর করে উজালা।

শুক্রবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৫

পল্লী স্মৃতি

বেগম সুফিয়া কামাল

বহুদিন পরে মনে পড়ে আজি পল্লী ময়ের কোল,
ঝাউশাখে যেথা বনলতা বাঁধি হরষে খেয়েছি দোল
কুলের কাটার আঘাত লইয়া কাঁচা পাকা কুল খেয়ে,
অমৃতের স্বাদ যেন লভিয়াছি গাঁয়ের দুলালী মেয়ে
পৌষ পার্বণে পিঠা খেতে বসে খুশীতে বিষম খেয়ে,
আরো উল্লাস বাড়িয়াছে মনে মায়ের বকুনি পেয়ে।
চৈত্র নিশির চাঁদিমায় বসি' শুনিয়াছি রূপকথা,
মনে বাজিয়াছে সুয়ো দুয়োরাণী দুখিনি মায়ের ব্যথা।
তবু বলিয়াছি মার গলা ধরে, "মাগো, সেই কথা বল,
রাজার দুলালে পাষাণ করিতে ডাইনী করে কি ছল!
সাতশ' সাপের পাহারা কাটায়ে পাতালবাসিনী মেয়ে,
রাজার ছেলেরে বাঁচায়ে কি করে পৌঁছিল দেশে যেয়ে।"
কল্পপূরীর স্বপনের কাঠি বুলাইয়া শিশু চোখে
তন্দ্রদোলায় লয়ে যেত মোরে কোথা দূর ঘুমলোকে
ঘুম হতে জেগে বৈশাখী ঝড়ে কুড়ায়েছি ঝরা আম
খেলার সাথীরা কোথা আজ তারা? ভুলিয়াও গেছি নাম।
নববর্ষার জলে অবগাহি কভু পুলকিত মনে
গান গাহিয়াছি মল্লার রাগে বাদলের ধারা সনে;
শিশির সিক্ত শেফালী ফুলের ঘন সৌরভে মাতি'
শারদ প্রভাতে সখীগন সাথে আনিয়াছি মালা গাঁথি'।
পল্লী নদীর জলে ভাসাইয়া মোচার খেলার তরী,
কাঁদিয়া ফিরেছি সাঁঝের আলোতে পুতুল বিদায় করি'।
আগামী দিনের আশা-ভরসার কত না মধুর ছবি
ফুঁটিয়া উঠেছে আঁখির পাতায় ডুবেছে যখন রবি।

মঙ্গলবার, ৩ নভেম্বর, ২০১৫

আজিকার শিশু


সুফিয়া কামাল  

আমাদের যুগে আমরা যখন খেলেছি পুতুল খেলা

তোমরা এ যগে সেই বয়সেই লেখাপড়া কর মেল।

আমরা যখন আকাশের তলে ওড়ায়েছি শুধু ঘুড়ি

তোমরা এখন কলের জাহাজ চালাও গগন জুড়ি।

উত্তর মেরু, দক্ষিণ মেরু সব তোমাদের জানা

আমরা শুনেছি সেখানে রয়েছে জিন ,পরী, দেও, দানা।

পাতালপুরীর অজানা কাহিনী তোমরা শোনাও সবে

মেরুতে মেরুতে জানা পরিচয় কেমন করিয়া হবে।

তোমাদের ঘরে আলোর অভাব কভূ নাহি হবে আর

আকাশ-আলোক বাঁধি আনি দূর করিবে অন্ধকার।

শস্য-শ্যামলা এই মাটি মা'র অঙ্গ পুষ্ট করে

আনিবে অটুট স্বাস্থ্য, সবল দেহ-মন ঘরে ঘরে।

তোমাদের গানে, কল-কলতানে উছসি উঠিবে নদী-

সরস করিয়া তৃণ ও তরুরে বহিবে সে নিরবধি

তোমরা আনিবে ফুল ও ফসল পাখি-ডাকা রাঙা ভোর

জগৎ করিবে মধুময়, প্রাণে প্রাণে বাঁধি প্রীতিডোর।
 .....................................................................  
 
Sufia Kamal, Ajikar Shishu