রবিবার, ২৬ মার্চ, ২০১৭

সবাইকে মহান স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা

মহান স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা


তুমি মিশ্রিত লগ্ন মাধুরীর জলে ভেজা কবিতায়
তুমি বাঙ্গালীর গর্ব, বাঙ্গালীর প্রেম প্রথম ও শেষ ছোঁয়ায়,
তুমি বঙ্গবন্ধুর রক্তে আগুনে জ্বলা জ্বালাময়ী সে ভাষন
তুমি ধানের শীষে মিশে থাকা শহীদ জিয়ার স্বপন
তুমি একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে বেজে উঠ সুমধুর,
তুমি রাগে অনুরাগে মুক্তি সংগ্রামের সোনা ঝরা সেই রোদ্দুর
তুমি প্রতিটি পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধার অভিমানের সংসার
তুমি ক্রন্দন, তুমি হাসি, তুমি জাগ্রত শহীদ মিনার।

আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি,
জন্ম দিয়েছ তুমি মাগো, তাই তোমায় ভালোবাসি।
আমার প্রানের বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি
প্রানের প্রিয় মা তোকে, বড় বেশী ভালোবাসি।

Full Song

সোমবার, ২০ মার্চ, ২০১৭

দু’টো মানুষ

অঞ্জন দত্ত

দু’টো মানুষ
এসাথে কত পথ চলা
হাতে হাত রেখে কথা বলা
কেন সব করে অবহেলা
কেন শেষ-মেষে এসে বিদায়
ফুলদানি
আছড়ে ভেঙ্গে চুড়মার
ফুল জল সব একাকার
নেমে আসে অন্ধকার
জানালার বাইরে নেমে আসে রাত
দু’টো বালিশ
কত স্বপ্ন ভালোবাসা বোঝাই
দেখে যায় এই কুৎসিত লড়াই
আশা আকাংখা সব পুড়ে ছাই
কেউ মুখ ফুটে কিছু বলে না
টেবিল ল্যাম্পের আধো অন্ধকারে
ভাঙ্গাচোড়া মন দুটো গুমড়ে গুমড়ে মরে
দুজনেই বসে থাকে হাত ধরবে বলে
কেউ মুখ ফুটে কিছুই বলে না
ভগবান তাই নেমে আসে না
আসে সকাল
চোখ মুছে চিঠি লেখা
ব্রিফকেস হাতে ট্যাক্সি ডাকা
ফিরে না তাকিয়ে দেখা
ইশ…
এইভাবে কেউ চলে যায়

duto manush

যেথা রামধনু উঠে হেসে


শিল্পীঃ কাদেরী কিবরিয়া ও সাবিহা মাহবুব
সুরকারঃ ভি বালসারা
গীতিকারঃ শ্যামল গুপ্ত


যেথা রামধনু উঠে হেসে
আর ফুল ফোটে ভালবেসে
বল তুমি যাবে কি গো সাথে
এই পথ গেছে সেই দেশে।
যেথা সব তিথি মধু তিথি
মধু মাস জেগে থাকে নিতি।
মন যেন প্রজাপতি হয়ে
পাখা মেলে দিয়ে চলে ভেসে।।
যেথা শুধু আলো শুধু আশা
সারাবেলা করে কানাকানি
চিরচেনা হয়ে পাশে থেকে
হয় মনে মনে জানা জানি
যেথা হাতখানি হাতে বাধা
বেনু বীনা একই সুরে সাধা।
তাই যত কথা বলা বাকি
যায় গান হয়ে তার রেশে।।

ছেলে আমার বড় হবে


শিল্পীঃ জেমস
অ্যালবামঃ বহুরূপী



ছেলে আমার বড় হবে
মাকে বলতো সে কথা
হবে মানুষের মত মানুষ এক
লেখা ইতিহাসের পাতায়
নিজ হাতে খেতে পারতাম না
বাবা বলতো ও খোকা
যখন আমি থাকবোনা
কি করবি রে বোকা
এ তো রক্তের সাথে রক্তের টান
স্বার্থের অনেক র্উধ্বে
হঠা” অজানা ঝড়ে তোমায় হারালাম
মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো
বাবা কতদিন কতদিন দেখিনা তোমায়
কেউ বলেনা তোমার মত
কোথায় খোকা ওরে বুকে আয়
বাবা কত রাত কত রাত দেখিনা তোমায়
কেউ বলে না মানিক কোথায় আমার
ওরে বুকে আয়।
চশমাটা তেমনি আছে
আছে লাঠি ও পাঞ্জাবি তোমার
ইজি চেয়ারটাও আছে
নেই সেখানে অলস দেহ শুধু তোমার
আজানের ধ্বনি আজো শুনি
ভাঙ্গাবেনা ভোরে ঘুম জানি
শুধু শুনিনা তোমার সেই
দরাজ কন্ঠে ভরা পবিত্র
কুরআনের বাণী।
বাবা কতদিন কতদিন দেখিনা তোমায়
কেউ বলেনা তোমার মত
কোথায় খোকা ওরে বুকে আয়
বাবা কত রাত কত রাত দেখিনা তোমায়
কেউ বলে না মানিক কোথায় আমার
ওরে বুকে আয়।
ছেলে আমার বড় হবে
মাকে বলতো সে কথা
হবে মানুষের মত মানুষ এক
লেখা ইতিহাসের পাতায়
নিজ হাতে খেতে পারতাম না
বাবা বলতো খোকা ও খোকা
যখন আমি থাকবোনা
কি করবি রে বোকা
এ তো রক্তের সাথে রক্তের টান
স্বার্থের অনেক র্উধ্বে
হঠা” অজানা ঝড়ে তোমায় হারালাম
মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো
বাবা কতদিন কতদিন দেখিনা তোমায়
কেউ বলেনা তোমার মত
কোথায় খোকা ওরে বুকে আয়
বাবা কত রাত কত রাত দেখিনা তোমায়
কেউ বলে না মানিক কোথায় আমার
ওরে বুকে আয়।

 chele amar boro hobe

মানুনিয়া (ও বিড়ালের ছানা)

ফেরদৌস ওয়াহিদ

ও বিড়ালের ছানা
গারে গান গানা
নারে নারে তারে না
জারী, সারী ভাটিয়ালী
যা খুশি তালেতে গা…
মামুনিয়া, মামুনিয়া, মামুনিয়া, মামুনিয়া
মামুনিয়া, মামুনিয়া, মামুনিয়া, মামুনিয়া
তালে তালে সকলে নাচে
বাবুই নাচে তালেরই গাছে
টুনা টুনি নাচে তালে তালে নাচে
আমি তো হায় নাচ জানি না
জারী, সারী ভাটিয়ালী
যা খুশি তালেতে গা…।।
ইদুর বলে ও বেড়াল ভাই
তুমি গান গাও আমি যে পালাই
চুপি চুপি চেয়ে বিড়াল গেল ধেয়ে
ইদুর হায় পালিয়ে বেড়ায়।
জারী, সারী ভাটিয়ালী
যা খুশি তালেতে গা…।।

আমার বাবার কথা বড়ই মনে পড়ে

শিল্পীঃ সৈয়দ আব্দুল হাদী
সুরকারঃ সৈয়দ আব্দুল হাদী
গীতিকারঃ গাজী মাজহারুল আনোয়ার


আমার বাবার কথা বড়ই মনে পড়ে
ছবির দিকে তাকিয়ে এখন দুচোখ জলে ভরে।।
আদর করে দুহাত ধরে মেলায় আমায় নিত
এক পয়সার পাতার বাঁশি বাবা কিনে দিত
কিনত নাটাই কিনত ঘুড়ি
বোনের জন্য আলতা চুড়ি
মায়ের জন্য ডুরে শাড়ি-কিনে ফিরতো ঘরে।।
মাঝে মাঝে বকতো বাবা পড়া ফাকি দিলে
ধারাপাতের নামতাগুলো খেতে হতো গিলে
সাংগ হত দিনের খেলা, উঠত তারা সন্ধা বেলা
বাবা এদের নাম শেখাতো-কতই যতন করে।।
এখন আমি নিজেই বাবা পাক ধরেছে চুলে
পেছন দিকে তাকিয়ে ভাবি স্মৃতির দোয়ার খোলে
আজও আমায় বাবাই ডাকে প্রতি কাজে জড়িয়ে থাকে
ওপাড় হতে বলছে যেন ভাল থাকিস ওরে।।

আমার নিশীথরাতের বাদলধারা



আমার নিশীথরাতের বাদলধারা,

এসো হে গোপনে

আমার স্বপনলোকে দিশাহারা।।

ওগো অন্ধকারের অন্তরধন,

দাও ঢেকে মোর পরান মন–

আমি চাই নে তপন, চাই নে তারা।।

যখন সবাই মগন ঘুমের ঘোরে নিয়ো গো, নিয়ো গো,

আমার ঘুম নিয়ো গো হরণ করে।

একলা ঘরে চুপ চুপে এসো কেবল সুরের রূপে–

দিয়ো গো, দিয়ো গো,

আমার চোখের জলের দিয়ো সাড়া।।
amar nishito rater badol dhara

যে কটা দিন তুমি ছিলে পাশে


শিল্পীঃ শ্রেয়া ঘোষাল, সপ্তর্ষি মুখার্জী
ছায়াছবি- বাইশে শ্রাবণ


যে কটা দিন তুমি ছিলে পাশে
কেটেছিল নৌকার পালে চোখ রেখে
আমার চোখে ঠোঁটে গালে তুমি লেগে আছ
যেটুকু রোদ ছিল লুকোনো মেঘ
দিয়ে বুনি তোমার সালে ভালোবাসা
আমার আঙুল হাতে কাঁধে তুমি লেগে আছ
তোমার নখের ডগায় তীব্র প্রেমের মানে
আমিও গল্প সাজাই তোমার কানে কানে
তাকিয়ে থাকি হাজার পর্দা উড়া বিকেল
শহর দুমড়ে মুছড়ে থাকুক অন্যদিকে
ট্রাফিকের এই ক্যাকাফোনই আমাদের স্বপ্ন চুষে খায়
যেভাবে জলদি হাত মেখেছে ভাত
নতুন আলুর খোসা আর এই ভালোবাসা
আমার দেয়াল ঘড়ি কাটায় তুমি লেগে আছ
যেমন জড়িয়ে ছিলে ঘুম ঘুম বরফ পাশে
আমিও খুঁজি তোমায় আমার আশে পাশে
আবার সন্ধ্যে বেলায় ফিরে যাওয়া জাহাজ বাঁশি
বুকে পাথর রাখা মুখে রাখা হাসি
যে যার নিজের দেশে আমরা স্রোত কুড়োতে যাই
যেভাবে জলদি হাত মেখেছে ভাত
নতুন আলুর খোসা আর এই ভালোবাসা।

je kota din tumi chile

জীবনের সব সুখ কেড়ে নিয়ে

শিল্পীঃ আগুন
অ্যালবামঃ কত দুঃখে আছি
সুরকারঃ আলী আকবর রুপু
গীতিকারঃ বাকীউল আলম

 
এই জীবনের সব সুখ কেড়ে নিয়ে তুমি সুখে আছ
এই হৃদয়ের সব আশা ভেংগে দিয়ে দূরে চলে গেছ
কী নিয়ে বেঁচে রবো একবারও তুমি যে ভাব নি
শত অনুনয় করেছি তোমাকে
তুমি তো রাখ নি ………
সুখেরই আশায় স্বপ্ন সাজাতে
চেয়েছে তোমায় এই মন
বুঝিনি তো আগে
মিথ্যে আবেগে
করেছ তুমি প্রহসন
কোন পিছু টানে আমি তোমায় পারিনি তো ফেরাতে
বিরহের ভালবাসা দিয়ে পারিনি তো জড়াতে
তোমাকে তো-মা-কে………
আভিমান নেইতো
নেইতো অভিযোগ
একটাই দুঃখ এ বুকে
এত কাছে এসে
এত ভালবেসে
চিনতে পারিনি তোমাকে
কী ভেবে তুমি এমন করে বদলে গিয়েছ
কী সুখের আশাতে এভাবে ফিরিয়ে দিয়েছ
আমাকে আ-মা-কে ………
এই জীবনের সব সুখ কেড়ে নিয়ে তুমি সুখে আছ
এই হৃদয়ের সব আশা ভেংগে দিয়ে দূরে চলে গেছ
কী নিয়ে বেঁচে রবো একবারও তুমি যে ভাব নি
শত অনুনয় করেছি তোমাকে
তুমি তো রাখ নি ………

আকাশের হাতে আছে একরাশ নীল


শিল্পীঃ আঞ্জুমান আরা বেগম
ছায়াছবি- আয়না ও অবশিষ্ট
সুরকারঃ সত্য সাহা
গীতিকারঃ গাজী মাজহারুল আনোয়ার


আকাশের হাতে আছে একরাশ নীল
বাতাসের আছে কিছু গন্ধ
রাত্রির গায়ে জ্বলে জোনাকি
তটিনীর বুকে মৃদু ছন্দ।।
আমার এ দু’হাত শুধু রিক্ত
আমার এ দু’চোখ জলে সিক্ত।
বুক ভরা নীরবতা নিয়ে অকারণ।
আমার এ দুয়ার হলো বন্ধ
ভেবে তো পাইনি আমি কি হলো আমার
লজ্জা প্রহরী কেন খোলে নাকো দ্বার।
বুঝি না কেমন করে বলব
খেয়ালে কতই ভেসে চলব।
বলি বলি করে তবু বলা হলো না
জানি না কিসে এতো দ্বন্দ্ব।।

 akasher haate ache

কবিতার মতো সে চোখ দুটো

হাসান

কবিতার মতো সে চোখ দুটো
এখন কোথায় তোমার?
যে চোখে অপলক দৃষ্টিতে
আমায় আপ্লুত করে রাখতে।
কবিতার মতো তাকিয়ে থাকা
এখন কোথায় বাঁধা পড়লো?
যে দৃষ্টিতে ছিলো শুধু আবেগ
যে চোখে আমায় ভালোবাসতে।
মনে পড়ে অলস প্রহর আমার
তোমারই কোমল ছোঁয়ায় প্রাণ পেতো।
হঠাৎ ভাঙনের ঝড় কেন এলো?
কেন দুটি জীবন করে দিয়ে এলোমেলো?
ভুলে গিয়ে অতীতের সব ভুল
যদি আবার শুরু থেকে শুরু করা যায়।
কেন দুটি হৃদয়ে প্রেম আসে?
কেন যে মানুষ বারেবার ভালবাসে?

kobitar moto she chokh duto

ম্যারী এ্যান


শিল্পীঃ অঞ্জন দত্ত
অ্যালবামঃ পুরোনো গীটার


কালো সাহেবের মেয়ে ইশকুল পালিয়ে
ধরতে তোমার দুটো হাত
কত মার খেয়েছি মুখ বুজে সয়েছি
অন্যায় কত অপবাদ
বয়স তখন ছিলো পনেরো তাই ছিলো
স্বপ্ন দেখার ব্যারাম
মাথার ভেতর ছিলো এলভিস প্রিসলি
খাতার ভেতর তোমার নাম
ম্যারী এ্যান
ম্যারী ম্যারী এ্যান
ম্যারী এ্যান ম্যারী
করে সব এলোমেলো এলভিস চলে গেলো
কেটে গেলো বছর অনেক
তোমারো মামা কাকা একে একে পাড়ি দিলো
সব্বাই মিলে বিলেত
রয়ে গেলে তোমরা আকড়ে রিপন স্ট্রিট
দু’টো ঘর সিড়ির তলায়
নোনা দেয়াল থেকে যীশূ ছলছল চোখে
হাত তুলে আশ্বাস দেয় এখনো
ম্যারী এ্যান
ম্যারী ম্যারী এ্যান
ম্যারী এ্যান ম্যারী
রিকশায় চড়ে তুমি দুলে দুলে চলে যাও
আমার পাড়া দিয়ে প্রায়ই
পাক ধরে গেছে চুলে গাল দুটো গেছে ঝুলে
নিয়মিত অবহেলায়
কোন এক অফিসেতে শর্ট হ্যান্ড নিতে নিতে
নখগুলো গেছে ক্ষয়ে
ছোট্ট বেলার প্রেম আমার কালো মেম
কোথায় গেলে হারিয়ে
ম্যারী এ্যান
ম্যারী ম্যারী এ্যান
ম্যারী এ্যান ম্যারী
তোমার বাবা ছিলো ইঞ্জিন ড্রাইভার
আমার বনেদি ব্যবসা
বংশের ইজ্জত রাখতে হলে বউ হতে হবে ফর্সা
বাঙালীর ছেলে তাই গলায় গামছা দিয়ে
ফেললাম করে বিয়ে
ছোট্ট বেলার প্রেম আমার কালো মেম
কোথায় গেলে হারিয়ে
ম্যারী এ্যান
ম্যারী ম্যারী এ্যান
ম্যারী এ্যান ম্যারী

যাচ্ছে জমে কত আড্ডাতর্ক




অঞ্জন দত্ত


যাচ্ছে জমে কত আড্ডাতর্ক

যাচ্ছে ভেঙে কত কত সম্পর্ক

বিগড়ে যাচ্ছে কত দম দেয়া যন্ত্র

এত সব যাচ্ছে কোথায়? '...

যাচ্ছে খুলে আবার ইশকুলগুলো

যাচ্ছে পড়ে মাথার সব চুলগুলো

যাচ্ছে হয়ে বারবার একই ভুলগুলো

এতসব যাচ্ছে কোথায়?

যাচ্ছে সরে মেঘ চাঁদটাকে ছাড়িয়ে

যাচ্ছে সবাই রোজ জঞ্জাল মাড়িয়ে

যাচ্ছে নেশার ঘোরে জিভটা জড়িয়ে

এতসব যাচ্ছে কোথায়?

---------------------------------অসম্পূর্ণ

শুক্রবার, ১৭ মার্চ, ২০১৭

বৃক্ষমানব: কার্তিক পরামানিক


১০ বছর বয়স থেকে গাছ লাগানো শুরু করেন। জীবনভর গাছ লাগাচ্ছেন এবং অন্যদের গাছ লাগাতে উদ্বুদ্ধ করছেন। তাঁর বসতভূমির ধু-ধু বালুচরে এখন সবুজের সমারোহ। চিরসবুজ সেই মানুষটি বলেছেন তাঁর জীবনকথা:

আগে বাড়ি ছিল চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের রাধাকান্তপুর গ্রামে। আত্মীয়স্বজন গ্রাম থেকে ভারত পাড়ি দিলে আমরা একা হয়ে পড়ি। বাবা তখন আমাদের নিয়ে আসেন মনাকষা ইউনিয়নের শ্যামপুর গ্রামে। এটা পাকিস্তান হওয়ার দুই-তিন বছর পরের কথা। আমার বয়স তখন মাত্র নয় বছর।
কিন্তু নতুন জায়গায় এসে কিছুই ভালো লাগে না। চারদিকে ধু ধু বালুচর। নেই গাছপালা। ঝড়-বাতাসে চোখে-মুখে ধুলা-বালুতে ভরে যায়। বাজার-হাট করতে মনাকষা যেতে হয়। ১২-১৩ কিলোমিটার রাস্তা। পায়ে জুতা-স্যান্ডেল নেই, মাথায় নেই ছাতা। রাস্তার গরম ধুলায় পায়ে ফোসকা পড়ার মতো অবস্থা। মাথার গামছা পায়ে দিয়ে একটু আরাম পাওয়ার চেষ্টা করি। বাবাকে কেঁদে কেঁদে বলি, ‘বাবা, কোন দেশে নিয়ে এলে। চলো, অন্য জায়গায় চলে যাই।’ বাবা সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, ‘দুঃখ করিস না বাবা, দেখবি কেউ একজন ঠিক দাঁড়িয়ে যাবে। গাছ লাগাবে, ওর দেখাদেখি তখন আরও কেউ গাছ লাগাবে। দেশ গাছে গাছে ভরে যাবে। গাছ লাগানো অনেক পুণ্যের কাজ। কী হবে গয়া-কাশি গিয়ে? তার থেকে বেশি পুণ্য হবে গাছ লাগালে।’ বাবার এ কথা আমার কচি মনে গেঁথে যায়। মনে মনে বলি, আমিই দাঁড়াব গাছ লাগানোর জন্য।
একদিন মা আমাকে নিয়ে কাকার বাড়ি বেড়াতে যান। গিয়ে দেখি, এক পাকুড়গাছের তলায় বীজ পড়ে চারা গজিয়েছে। সেখান থেকে চারা নিয়ে আসি। লাগাই শ্যামপুর গ্রামের তিন রাস্তার মোড়ে। তখন আমার বয়স ১০ বছর। সেই আমার গাছ লাগানো শুরু। ওই চারাগাছই এখন এলাকার বড় গাছের একটি। গাছের বয়স ৬২ বছর। অনেক কষ্ট করে গাছটিকে যত্ন করি, রক্ষা করি ঝড়-বৃষ্টি থেকে। যেন ছোট গাছটা ভেঙে না পড়ে। এ জন্য কখনো-সখনো ভিজতে ভিজতে গাছটি ধরে দাঁড়িয়ে থেকেছি।
গাছটি কিছুটা বড় হওয়ার পর থেকেই শুরু হয় প্রতিবছর আমার গাছ লাগানো। গ্রামের রাস্তাঘাট, হাট-বাজার, ঈদগাহ-গোরস্থান, বিডিআর (বতর্মানে বিজিবি) সীমান্ত ফাঁড়ি কোনো স্থানই বাদ যায়নি। হাট-বাজারে নাপিতের কাজ করি। সেই উপার্জনের টাকা দিয়ে গড়ে তুলি নার্সারি। গাছে ঠেকা দেওয়ার জন্য কিনি বাঁশ। গাছ লাগানোর সময় মজুর লাগাই। মানুষজন আমাকে পাগল বলে। ঠাট্টা-মশকরা করে বলে, গরিবের ঘোড়ারোগ ধরেছে। আরও বলে, বছর বছর গাঁটের পয়সা খরচ করে গাছ লাগিয়ে তোমার কী লাভ? মনে মনে বলি, ইহকালে লাভ না হোক পরকালে তো হবে। মানুষ যদি দোয়া না করে তো কি। পাখ-পাখালি তো করবে। তারা বট-পাকুড়-জামগাছে বসবে। ফল খাবে। তাদের জন্যও তো গাছ দরকার। বছর বছর গাছ লাগাতে লাগাতে এলাকার ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে গাছে গাছে ভরে যায়। আমরা দেখি লোকে এখন বাড়ির ফাঁকা জায়গায়ও গাছ লাগায়। অনেক দিন আগে থেকেই এলাকা সবুজে ভরে গেছে। একদিন এখানে যে ধু ধু বালুর চর ছিল, তা বোঝাই যায় না।
গাছ লাগানো শুরুর ৫৩ বছর পর প্রথম আলো আমাকে আবিষ্কার করে। ২০০৩ সালের ২ নভেম্বর আমাকে নিয়ে খবর প্রকাশ করে। প্রথম পাতায় খবরের শিরোনাম ছিল, ‘বিরাট বিরাট বৃক্ষ যেন একেকটি কার্তিকনামা’। খবর প্রকাশের পর আমাকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের বন্ধুসভা প্রথম সংবর্ধনা দেয়।
ওই বছরের ৪ কি ৫ ডিসেম্বর তত্কালীন বিডিআরের ৬ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল শহীদ উদ্দিন খান পিএসসি আমার গাছ লাগানোর ইতিহাস শুনে তিনি আমাকে মনাকষা বিওপিতে ডেকে পুরস্কার প্রদান করেন। সেই খবর পেপার-পত্রিকায় প্রকাশ পাওয়ার পর আমার কথা দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে পড়ে। আর আমাকে নিয়ে মাতামাতি শুরু হয়। তার পর থেকেই আমি হয়ে গেছি ‘বৃক্ষপ্রেমিক কার্তিক পরামানিক’। বর্তমানে আমি অনেক পুরস্কার লাভ করেছি। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, প্রথম আলো বন্ধুসভা পুরস্কার (২০০৩), রাজশাহী সিটি করপোরেশন পুরস্কার (২০০৩), বনবিভাগ ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের বৃক্ষমেলা পদক (২০০৭), বৃক্ষরোপণে প্রধান উপদেষ্টার জাতীয় পুরস্কার (২০০৬), গণস্বাস্থ্য পদক (২০০৭), চার্চ অব বাংলাদেশ সোসাল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম রজতজয়ন্তী পুরস্কার (২০০৭), চ্যানেল আই কৃষি পদক (২০০৭), চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শিক্ষক সমিতির পুরস্কার (২০১২), মার্কেন্টাইল ব্যাংক সম্মাননা পদক (২০১৩) এবং স্টান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংক পদক (২০১৪)। এ ছাড়া ২০১৩ সালে অষ্টম শ্রেণির ইংরেজি বইয়ে আমাকে পাঠ্য তালিকায় নিয়ে আসা হয়েছে। এটিও আমার কাছে বড় পাওয়া।(২০১৩ সালে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের অষ্টম শ্রেণির ইংরেজি পাঠ্যবইয়ে ‘আ ম্যান হু লাভস ট্রি’ শিরোনামে তাঁর কীর্তি অন্তর্ভুক্ত করা হয়।) আজ একটি কথা মনে পড়ছে, তা হলো ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আনোয়ারুল ইকবাল আমার চাওয়া পাওয়া কি জানতে চাইলে, আমি বলি ব্যক্তিগতভাবে আমার চাওয়ার কিছু নেই। তবে এলাকার মানুষের বড় অভাব হচ্ছে রাস্তার। সেসময় তিনি আমাকে ৮ কি. মিটার রাস্তা ও দুটি সাঁকো নির্মাণের আশ্বাস দেন। ওই সময় আমার চোখে জল চলে আসে। পরবর্তীতে এলাকাবাসী রাস্তা ও সাঁকো পেয়েছে। আজ আর পায়ে হেঁটে মনাকষা বা শিবগঞ্জ আসতে হয় না।
২০১০ সালের মধ্যেই আমার গ্রাম পর্যন্ত রাস্তাটি পাকা করে দেয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। রাস্তাটা পাকা হওয়ায় এলাকার লোকজন আমাকে খুব সম্মান করেন। কাছে ডেকে কৃতজ্ঞতা জানান। প্রশাসনের লোকজনও আমাকে সম্মান করেন। আমার কথা রাখেন। এলাকার লোকজন কোনো সমস্যায় পড়লে আমার কাছে ছুটে আসেন। আমি স্থানীয় প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে কথা বলি। মানুষের উপকার করতে পেরে আনন্দ পাই।
আগে মনে হতো, গাছ লাগানোর ফল পরকালেই পাব। কিন্তু প্রথম আলোয় সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর আমার খবর ছড়িয়ে পড়ে। তার ফল এ জীবনেই পেতে শুরু করি। প্রথম আলোর ১০ বছর পূর্তিতে আমার ছবিসহ বড় বড় সাইনবোর্ড ঢাকার বিভিন্ন মোড়ে লাগায় তারা। ঢাকায় কর্মরত এলাকার লোকজন এসে আমাকে জানান সে কথা। আমি নিজে গিয়ে দেখে আসি। আনন্দে-গর্বে আমার বুক ভরে যায়। এ জীবনে এত সম্মান আর এত ভালোবাসা পাব কখনো ভাবিনি। যদিও সম্মান বা কোনো কিছু পাওয়ার আশায় গাছ লাগাইনি। পথক্লান্ত পথিক, পাখপাখালিকে একটু শান্তি দিতে ও এলাকার ধু ধু পরিবেশ দূর করতেই গাছ লাগিয়েছি। এই শরীর যত দিন চলবে, গাছ লাগানোও তত দিন চলবে।
সবার কাছে আমার আবেদন, বেশি বেশি গাছ লাগান, পরিবেশ বাঁচান। না হলে আমরা ভালোভাবে বাঁচতে পারব না। পাখপাখালিও বাঁচতে পারবে না। এ ছাড়া, গাছই তো জীবন।

Source:
http://archive.prothom-alo.com/detail/date/2012-11-23/news/308194
http://www.bd-pratidin.com/home/printnews/133114/2016-03-17