বৃহস্পতিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

আয় আর সেবা দিন, তারপর আয়কর নিন

সব দেশের মানুষই কর ফাঁকি দিতে চায়। তা সত্ত্বেও অনেক দেশ নাগরিকদের কাছ থেকে প্রাপ্যটা ঠিকই আদায় করে নেয়। এর পাশাপাশি সবার জন্য ন্যূনতম আয় এবং নাগরিক সুবিধাও নিশ্চিত করে তারা। বাংলাদেশ সরকারেরও নেয়ার আগে দেয়া উচিত।

জার্মানিতে কর না দিয়ে থাকা মুশকিল। কর দিতে সবাই একরকম বাধ্য। প্রতিমাসে বেতনের প্রায় প্রায় অর্ধেক টাকা কেটে বাকি টাকার একটা হিসেব ধরিয়ে দেয়া হয়।

প্রায় চার বছর ধরে আমিও এই নিয়মের অধীন। ধরিয়ে দেয়া হিসেবে পরিষ্কার লেখা থাকে, প্রকৃত বেতন কত আর সব কাটাকুটির পরে পাবো কত। প্রথমে বেশ আফসোস হতো, ভাবতাম, ‘ইশ, এতগুলো টাকা কেটে নেয়!’

অবশ্য টাকাটা হঠাৎ কাটতে শুরু করেনি। নিয়োগপত্রেই বিষয়টির উল্লেখ ছিল। প্রতিমাসে কোন খাতে কত টাকা কেটে নেওয়া হয়েছে তার অনুপুঙ্খ বর্ণনা থাকে। সেখানে স্বাস্থ্য বীমা, অবসর ভাতা, বেকার ভাতা, জার্মানির পূর্বাঞ্চলের উন্নয়ন কর-সহ সব খাতেরই উল্লেখ থাকে।

এতগুলো টাকা যে কেটে নিচ্ছে, তা নিয়ে কি মনে কোনো অসন্তোষ আছে? এখন আর একদমই নেই। না থাকার একটাই কারণ – পারিশ্রমিক থেকে যে টাকা কেটে নেয়া হয়, সময়মতো সমানুপাতিক বা তার চেয়ে বেশি হারে তা ফিরিয়েও দেয় জার্মান সরকার।

ব্যাপারটা বোঝাতে নিজের অভিজ্ঞতা থেকে শুধু দু’টো উদাহরণ দেবো।

২০১৪ সালে আমার একটা হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল। এমন বিপদ কখনো বলে-কয়ে আসে না। হঠাৎ ঝড়ের মতো এসে সব তছনছ করে দিয়ে যায়।

কিন্তু হয়ত জার্মানিতে ছিলাম বলেই ঝড়টা শরীর টের পেলেও, মনের ওপর বা পরিবারে তার তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। ডাক্তার রোগ নির্ণয়ের পরই অ্যাম্বুলেন্স ডেকেছিলেন। অ্যাম্বুলেন্সটাই ছিল মিনি হাসপাতাল। ছোট হাসপাতালে শুয়ে কয়েক মিনিটেই পৌঁছে যাই এই বন শহরেরই একটি হাসপাতালে।

দুপুরে অ্যাম্বুলেন্সে উঠলাম, বিকেল গড়ানোর আগেই অস্ত্রোপচার শেষ। কেউ একবার এসে বলেওনি, অপারেশনে কত টাকা লাগবে। বলার দরকারই পড়েনি।

ডাক্তার শুধু দেখেছেন আমার হেল্থ ইনস্যুরেন্স কার্ড। ঐ কার্ডই আমার হয়ে কথা বলেছে, বলেছে, ‘এই রোগী জার্মানিতে আসার পর থেকে তার কষ্টের উপার্জন দিয়ে এই দিনটির জন্য কিছু টাকা জমা করেছে। সুতরাং তাকে সারিয়ে তোলাই প্রথম ও শেষ দায়িত্ব। এর মাঝে কোনো কথা নেই। চিকিৎসার খরচ নিয়ে কোনো দরাদরির প্রশ্ন নেই। প্রশ্ন একটাই– রোগীকে কত তাড়াতাড়ি সারিয়ে তোলা যাবে?’

সারিয়ে তুলতে প্রথমে দরকার ছিল অপারেশন। তা তারা কালবিলম্ব না করেই করেছেন। তারপর দরকার ছিল বাকি জীবন নিজেকে সুস্থ রাখার বিষয়ে রোগীকে সচেতন করা, কিছু প্রশিক্ষণ দেয়া। তা-ও তারা দিয়েছেন।

জার্মান সরকার বা চিকিৎসাসেবকদের কাছ থেকে এর বেশি কী চাইতে পারি আমি?

হার্ট অ্যাটাকের পরেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, প্রবাসে আর একা থাকা নয়। তা পরিবার যদি নিয়ে আসি, চলব কীভাবে? বেতন থেকে যে এতগুলো টাকা কেটে নেয়, বাকি টাকায় সংসার চালানো যাবে?

সহকর্মীরা বললেন, ‘সে চিন্তা সরকারের৷ পরিবার এলে এত টাকা কাটবে না৷ কম কাটবে৷ ফলে আয় বেড়ে যাবে।’

সত্যিই তাই। পরিবারের সদস্যদের নাম এখানে নথিভুক্ত হওয়ার পরই মাস শেষে একটু বেশি টাকা ব্যাংকে জমা হতে লাগল। কিছুদিন পর টাকার অঙ্কটা আরেকটু বাড়ল।

কেন জানেন? আমার সন্তান যে স্কুলে যায়! তার একটা খরচ আছে না? সেই খরচের একটা অংশ দেয়ার দায়িত্ব আপনাআপনিই নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছে জার্মান সরকার। আমি শুধু নিয়ম মেনে জানিয়েছিলাম, সন্তান স্কুলে যাচ্ছে, লেখাপড়া করছে।

কর সব দেশের সব উপার্জনক্ষম নাগরিকেরই দেয়া উচিত। তবে জীবনের মৌলিক চাহিদা পূরণের ন্যূনতম সামর্থ্য না থাকলে মানুষ কর দেবে কী করে? তাই সেদিকটা মাথায় রাখতে হবে৷ আর কর নেয়ার আগে যথেষ্ট নাগরিক সেবার নিশ্চয়তা দিতে হবে সরকারকে।
 

সূত্র: ডয়চে ভেলে

সোমবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

মন বলেছে আমার

Singer: Jeet Gannguli
Music: Jeet Gannguli
Lyrics: Prasen
Love Express Movie

মন বলেছে আমার আজ সঙ্গে যাবে তোর,
মরবে আরাম করে আর বাঁচবে বড়জোর । ( ২ বার )
সবকিছু পেরিয়ে, হবে রাত ছাড়িয়ে ভোর ।

মন বলেছে আমার আজ সঙ্গে যাবে তোর,
মরবে আরাম করে আর বাঁচবে বড়জোর ।

র‍্যাপ : লেগে গেছে ভালো তাই , পরে গেছি প্রেমে তোর ,
থামছে না আর এই জার্নি ।
দেখা শোনা হয়ে যাক , বোঝাপড়া হয়ে থাক ,
হিংসুটে দুনিয়াটা চাপ নিক ।
রংবাজ , রংরুট , হাতছানি , হাইগ্রেদ , সবাই কে ফেলেদিক সাইডে ।
ছোট করে বুঝে নে, তুই আমি দুজনে , ঊরে যাব স্বপ্নের ফ্লাইট এ ।

আজ আকাশের সাথে এক সন্ধি করেছি ,
মেঘেরই জেল খানায় , তোকে বন্ধী করেছি ।

আর দেবনা যেতে, এই বৃষ্টি দিনের আকাশ ,
তোর দুচোখের হাসি , বড় করছে নাজেহাল ।

মন বলেছে আমার আজ সঙ্গে যাবে তোর,
মরবে আরাম করে আর বাঁচবে বড়জোর । ( ২ বার )

সবকিছু পেরিয়ে, হবে রাত ছাড়িয়ে ভোর ।

মন বলেছে আমার আজ সঙ্গে যাবে তোর,
মরবে আরাম করে আর বাঁচবে বড়জোর ।

মন বলেছে আমার আজ সঙ্গে যাবে তোর ।

আজকে প্রেমের হাওয়া গায়ে লাগলো বলে তাই,
ইচ্ছে উড়ান দিলো আর বলল তোকে চাই ।

অল্প রোদের দিনে তোকে গল্প পাঠালাম ,
মনকে মনের হাতে তুই ঝর্না হয়ে নাম ।

মন বলেছে আমার আজ সঙ্গে যাবে তোর,
মরবে আরাম করে আর বাঁচবে বড়জোর ।

সবকিছু পেরিয়ে, হবে রাত ছাড়িয়ে ভোর ।
মন বলেছে আমার আজ সঙ্গে যাবে তোর ।

mon boleche amar
mon bolese amar

The Bogus Boo

by James Reeves
 
The bogus boo is a creature who
comes out at night, and why?
He likes the air, he likes to scare
the nervous passer-by!

He has two wings - pathetic things -
with which he cannot fly.
His tusks are fierce, yet could not pierce
the softest butterfly.

He has two ears , but what he hears
is very faint and small.
And with his claws on his four paws
he cannot scratch at all.

He looks too wise with his owl eyes,
his aspects grim and ghoulish.
But truth to tell, he sees not well
and is distinctly foolish.

The bogus boo - what can he do,
but huffle in the dark?
So don't take fright: he has no bite,
and very little bark!

শুক্রবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

এক গাঁয়ে

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
.................
আমরা দু'জন একটি গাঁয়ে থাকি
সে আমাদের একটিমাত্র সুখ
তাদের গাছে গায়যে দোয়েল পাখি
তাহার গানে আমার নাচে বুক ।
তাহার দু'টি পালন করা ভেড়া
চরে বেড়ায় মোদের বটমূলে,
যদি ভাঙ্গে আমার ক্ষেতের বেড়া
কোলের পরে নেই তাহারে তুলে ।
আমাদের এই গ্রামের নামটি খঞ্জনা
আমাদের এই নদীর নামটি অঞ্জনা
আমার নাম তো জানে গাঁয়ের পাঁচজনে
আমাদের সেই তাহার নামটি রঞ্জনা ।

দুইটি পাড়ায় বড়ই কাছাকাছি
মাঝখানে শুধু একটি মাঠের ফাঁক
তাদের বনের অনেক মধু-মাছি
মোদের বনে বাঁধে মধুর চাক।
তাদের ঘাটের পূজার জবা মালা
ভেসে আসে মোদের বাঁধা ঘাটে
তাদের পাড়ার কুসুম ফুলের ডালা
বেচতে আসে মোদের পাড়ার হাটে ।
আমাদের এই গ্রামের নামটি খঞ্জনা
আমাদের এই নদীর নামটি অঞ্জনা
আমার নাম তো জানে গাঁয়ের পাঁচজনে
আমাদের সেই তাহার নামটি রঞ্জনা ।

আমাদের এই গ্রামের গলি পরে
আমের বোলে ভরে আমের বন
তাদের ক্ষেতে যখন তিসি ধরে
মোদের ক্ষেত তখন ফোটে শন ।
তাদের ছাদে যখন উঠে তারা
আমার ছাদে দখিন হাওয়া ছোটে
তাদের বনে ঝরে শ্রাবণ-ধারা
আমার বনে কদম ফোটে ওঠে ।
আমাদের এই গ্রামের নামটি খঞ্জনা
আমাদের এই নদীর নামটি অঞ্জনা
আমার নাম তো জানে গাঁয়ের পাঁচজনে
আমাদের সেই তাহার নামটি রঞ্জনা ।

আমি এক যাযাবর

আমি এক যাযাবর
আমার নাই ঠিকানা ঘর ,
আমার মনে আমার ব্যথা
তোমার কি খবর?
আমি ঘর ভোলা এক পথিক যেন
গাই পথেরই গান ,
তোমার প্রতি আমার কেন
এতো বেশি টান?
তোমায় নিয়ে নাউ ভাসিয়ে
হব তেপান্তর......
আমি আমার সাথে একা একা
কারও সাথে নাইরে দেখা ,
হাসি কান্নায় ভরে রাখি
আমার এই অন্তর .
সুর্য ডুবিয়া গেলে
আসে তারার মেলা
আমি নেই পাশে
তুমি কি ভালো আছো একেলা ???

বুধবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

জলে ভাসা পদ্ম আমি

Pratima Banerjee. 
Lyric: Shibdas Banerjee, 
Music: Bupen Hazarika

জলে ভাসা পদ্ম আমি
শুধুই পেলাম ছলনা
ও আমার সহেলী,
আমার নাই তো কোথাও কোন ঠাঁই
বুকের জ্বালা কোথায় যে জুড়াই
বুকের জ্বালা কোথায় যে জুড়াই
ও আমার সহেলী,
আমার নাই তো কোথাও কোন ঠাঁই
চুয়া চন্দন ফুলের মালা
নাইতো এ কপালে
সুখযে আমার সতীন কাঁটা
ছেড়েছে কোন কালে
বেশ বসনে কাজ কি আমার
কারে বা দেখাই
আমি কারে বা দেখাই
ও আমার সহেলী,
আমার নাই তো কোথাও কোন ঠাঁই

পাঁচজনে যে বলে আমায়
কলংকিনী রাধা
একুল ওকুল নাইতো আমার
পদে পদে বাধা
কে যে দেবে পাড়ের কড়ি
কোথায় তারে পাই
আমি কোথায় তারে পাই
ও আমার সহেলী,
আমার নাই তো কোথাও কোন ঠাঁই
বুকের জ্বালা কোথায় যে জুড়াই
বুকের জ্বালা কোথায় যে জুড়াই
ও আমার সহেলী,
আমার নাই তো কোথাও কোন ঠাঁই
জলে ভাসা পদ্ম আমি
শুধুই পেলাম ছলনা
শুধুই পেলাম ছলনা
ও আমার সহেলী,
আমার নাই তো কোথাও কোন ঠাঁই
Click Here To Hear 

Jale Bhasha Poddo Ami 

শনিবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

বিদ্রোহী

বল বীর-
বল উন্নত মম শির!
শির নেহারী' আমারি নতশির ওই শিখর হিমাদ্রীর!
বল বীর-
বল মহাবিশ্বের মহাকাশ ফাড়ি'
চন্দ্র সূর্য্য গ্রহ তারা ছাড়ি'
ভূলোক দ্যূলোক গোলোক ভেদিয়া
খোদার আসন ‘আরশ’ ছেদিয়া,
উঠিয়াছি চির-বিস্ময় আমি বিশ্ববিধাতৃর!
মম ললাটে রুদ্র ভগবান জ্বলে রাজ-রাজটীকা দীপ্ত জয়শ্রীর!
বল বীর-
আমি চির-উন্নত শির! আমি চিরদুর্দম, দূর্বিনীত, নৃশংস,
মহাপ্রলয়ের আমি নটরাজ, আমি সাইক্লোন, আমি ধ্বংস!
আমি মহাভয়, আমি অভিশাপ পৃথ্বীর,
আমি দূর্বার,
আমি ভেঙে করি সব চুরমার!
আমি অনিয়ম উচ্ছৃঙ্খল,
আমি দ’লে যাই যত বন্ধন, যত নিয়ম কানুন শৃঙ্খল!
আমি মানি না কো কোন আইন,
আমি ভরা-তরী করি ভরা-ডুবি, আমি টর্পেডো, আমি ভীম ভাসমান মাইন!
আমি ধূর্জটী, আমি এলোকেশে ঝড় অকাল-বৈশাখীর
আমি বিদ্রোহী, আমি বিদ্রোহী-সুত বিশ্ব-বিধাতৃর!
বল বীর-
চির-উন্নত মম শির! আমি ঝঞ্ঝা, আমি ঘূর্ণি,
আমি পথ-সম্মুখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’।
আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ,
আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ।
আমি হাম্বীর, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল,
আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’
পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’
ফিং দিয়া দেই তিন দোল্‌;
আমি চপোলা-চপোল হিন্দোল।
আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা’,
করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা,
আমি উন্মাদ, আমি ঝঞ্ঝা!
আমি মহামারী, আমি ভীতি এ ধরীত্রির;
আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ণ চির অধীর।
বল বীর-
আমি চির-উন্নত শির! আমি চির-দূরন্ত দুর্মদ
আমি দূর্দম মম প্রাণের পেয়ালা হর্দম্‌ হ্যায় হর্দম্‌ ভরপুর্‌ মদ। আমি হোম-শিখা, আমি সাগ্নিক জমদগ্নি,
আমি যজ্ঞ, আমি পুরোহিত, আমি অগ্নি।
আমি সৃষ্টি, আমি ধ্বংস, আমি লোকালয়, আমি শ্মশান,
আমি অবসান, নিশাবসান। আমি ঈন্দ্রাণী-সুত হাতে চাঁদ ভালে সূর্য
মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী আর হাতে রণ তূর্য; আমি কৃষ্ণ-কন্ঠ, মন্থন-বিষ পিয়া ব্যথা বারিধির।
আমি ব্যোমকেশ, ধরি বন্ধন-হারা ধারা গঙ্গোত্রীর।
বল বীর-
চির-উন্নত মম শির! আমি সন্ন্যাসী, সুর সৈনিক,
আমি যুবরাজ, মম রাজবেশ ম্লান গৈরিক।
আমি বেদুইন, আমি চেঙ্গিস,
আমি আপনারে ছাড়া করি না কাহারে কূর্ণিশ।
আমি বজ্র, আমি ঈষাণ-বিষানে ওঙ্কার,
আমি ইস্রাফিলের শৃঙ্গার মহা-হুঙ্কার,
আমি পিনাক-পাণির ডমরু ত্রিশুল, ধর্মরাজের দন্ড,
আমি চক্র-মহাশঙ্খ, আমি প্রণব-নাদ প্রচন্ড!
আমি ক্ষ্যাপা দুর্বাসা, বিশ্বামিত্র-শিষ্য,
আমি দাবানল-দাহ, দহন করিব বিশ্ব।
আমি প্রাণ-খোলা হাসি উল্লাস, -আমি সৃষ্টি-বৈরী মহাত্রাস
আমি মহাপ্রলয়ের দ্বাদশ রবির রাহু-গ্রাস!
আমি কভু প্রশান্ত, -কভু অশান্ত দারুণ স্বেচ্ছাচারী,
আমি অরুণ খুনের তরুণ, আমি বিধির দর্পহারী!
আমি প্রভঞ্জনের উচ্ছাস, আমি বারিধির মহাকল্লোল,
আমি উজ্জ্বল, আমি প্রোজ্জ্বল,
আমি উচ্ছল জল-ছল-ছল, চল ঊর্মির হিন্দোল-দোল!- আমি বন্ধনহারা কুমারীর বেনী, তন্বী নয়নে বহ্নি,
আমি ষোড়শীর হৃদি-সরসিজ প্রেম উদ্দাম, আমি ধন্যি! আমি উন্মন, মন-উদাসীর,
আমি বিধবার বুকে ক্রন্দন-শ্বাস, হা-হুতাশ আমি হুতাশীর।
আমি বঞ্চিত ব্যথা পথবাসী চির গৃহহারা যত পথিকের,
আমি অবমানিতের মরম-বেদনা, বিষ-জ্বালা, প্রিয় লাঞ্ছিত বুকে গতি ফের
আমি অভিমানী চির ক্ষূব্ধ হিয়ার কাতরতা, ব্যাথা সূনিবিড়,
চিত চুম্বন-চোর-কম্পন আমি থর থর থর প্রথম পরশ কুমারীর!
আমি গোপন-প্রিয়ার চকিত চাহনি, ছল ক’রে দেখা অনুখন,
আমি চপল মেয়ের ভালোবাসা, তাঁর কাঁকণ-চুড়ির কন্‌-কন্‌।
আমি চির শিশু, চির কিশোর,
আমি যৌবন-ভীতু পল্লীবালার আঁচর কাচুলি নিচোর!
আমি উত্তর-বায়ু মলয়-অনিল উদাস পূরবী হাওয়া,
আমি পথিক-কবির গভীর রাগিণী, বেণু-বীণে গান গাওয়া।
আমি আকুল নিদাঘ-তিয়াসা, আমি রৌদ্র-রুদ্র রবি
আমি মরু-নির্ঝর ঝর-ঝর, আমি শ্যামলিমা ছায়াছবি!
আমি তুরীয়ানন্দে ছুটে চলি, এ কি উন্মাদ আমি উন্মাদ!
আমি সহসা আমারে চিনেছি, আমার খুলিয়া গিয়াছে সব বাঁধ! আমি উত্থান, আমি পতন, আমি অচেতন চিতে চেতন,
আমি বিশ্বতোরণে বৈজয়ন্তী, মানব-বিজয়-কেতন।
ছুটি ঝড়ের মতন করতালী দিয়া
স্বর্গ মর্ত্য-করতলে,
তাজী বোর্‌রাক্‌ আর উচ্চৈঃশ্রবা বাহন আমার
হিম্মত-হ্রেষা হেঁকে চলে! আমি বসুধা-বক্ষে আগ্নেয়াদ্রী, বাড়ব বহ্নি, কালানল,
আমি পাতালে মাতাল, অগ্নি-পাথার-কলরোল-কল-কোলাহল!
আমি তড়িতে চড়িয়া, উড়ে চলি জোড় তুড়ি দিয়া দিয়া লম্ফ,
আমি ত্রাস সঞ্চারি’ ভুবনে সহসা, সঞ্চারি ভূমিকম্প। ধরি বাসুকির ফণা জাপটি’-
ধরি স্বর্গীয় দূত জিব্রাইলের আগুনের পাখা সাপটি’। আমি দেবশিশু, আমি চঞ্চল,
আমি ধৃষ্ট, আমি দাঁত দিয়া ছিঁড়ি বিশ্ব-মায়ের অঞ্চল!
আমি অর্ফিয়াসের বাঁশরী,
মহা-সিন্ধু উতলা ঘুম্‌ঘুম্‌
ঘুম্‌ চুমু দিয়ে করি নিখিল বিশ্বে নিঝ্‌ঝুম
মম বাঁশরীর তানে পাশরি’।
আমি শ্যামের হাতের বাঁশরী। আমি রুষে উঠে যবে ছুটি মহাকাশ ছাপিয়া,
ভয়ে সপ্ত নরক হাবিয়া দোযখ নিভে নিভে যায় কাঁপিয়া!
আমি বিদ্রোহ-বাহী নিখিল অখিল ব্যাপিয়া! আমি শ্রাবণ-প্লাবন-বন্যা,
কভু ধরনীরে করি বরণীয়া, কভু বিপুল ধ্বংস ধন্যা-
আমি ছিনিয়া আনিব বিষ্ণু-বক্ষ হইতে যুগল কন্যা!
আমি অন্যায়, আমি উল্কা, আমি শনি,
আমি ধূমকেতু জ্বালা, বিষধর কাল-ফণী!
আমি ছিন্নমস্তা চন্ডী, আমি রণদা সর্বনাশী,
আমি জাহান্নামের আগুনে বসিয়া হাসি পুষ্পের হাসি! আমি মৃন্ময়, আমি চিন্ময়,
আমি অজর অমর অক্ষয়, আমি অব্যয়!
আমি মানব দানব দেবতার ভয়,
বিশ্বের আমি চির-দুর্জয়,
জগদীশ্বর-ঈশ্বর আমি পুরুষোত্তম সত্য,
আমি তাথিয়া তাথিয়া মাথিয়া ফিরি স্বর্গ-পাতাল মর্ত্য!
আমি উন্মাদ, আমি উন্মাদ!!
আমি সহসা আমারে চিনেছি, আজিকে আমার খুলিয়া গিয়াছে সব বাঁধ!! আমি পরশুরামের কঠোর কুঠার,
নিঃক্ষত্রিয় করিব বিশ্ব, আনিব শান্তি শান্ত উদার!
আমি হল বলরাম স্কন্ধে,
আমি উপাড়ি' ফেলিব অধীন বিশ্ব অবহেলে নব সৃষ্টির মহানন্দে। মহা- বিদ্রোহী রণ-ক্লান্ত
আমি সেই দিন হব শান্ত,
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল, আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না,
অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না -
বিদ্রোহী রণ-ক্লান্ত
আমি আমি সেই দিন হব শান্ত!
আমি বিদ্রোহী ভৃগু, ভগবান বুকে এঁকে দিই পদ-চিহ্ন,
আমি স্রষ্টা-সূদন, শোক-তাপ-হানা খেয়ালী বিধির বক্ষ করিব-ভিন্ন!
আমি চির-বিদ্রোহী বীর -
আমি বিশ্ব ছাড়ায়ে উঠিয়াছি একা চির-উন্নত শির!

বিদ্রোহী বাংলা ভাষার বিখ্যাত কবিতাসমূহের একটি। এটি কাজী নজরুল ইসলাম বিরচিত। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে, বিজলী পত্রিকায়। এরপর প্রকাশিত হয় মাসিক প্রবাসী, মাসিক সাধনা এবং ধূমকেতু পত্রিকায়। প্রকাশিত হওয়া মাত্রই এটি ব্যাপক জাগরণ সৃষ্টি করে। দৃপ্ত বিদ্রোহী মানসিকতা এবং অসাধারণ শব্দবিন্যাস ও ছন্দের জন্য আজও বাঙালি মানসে কবিতাটি "চির উন্নত শির" বিরাজমান।

কাজী নজরুল ইসলাম (মে ২৪, ১৮৯৯ – আগস্ট ২৯, ১৯৭৬)

বুধবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

Bondhu, Topu ।। বন্ধু, তপু



কন্ঠঃ তপু

কথা,সুরঃ তপু
কম্পোজিশনঃ রাফা
অ্যালবামঃ সে কে (Rafa ft Topu)


পুরো পৃথিবী এক দিকে আর আমি অন্য দিক
সবাই বলে করছো ভুল আর তোরা বলিস ঠিক
তোরা ছিলি, তোরা আছিস, জানি তোরাই থাকবি
বন্ধু বোঝে আমাকে, বন্ধু আছে আর কি লাগে?
সুসম্পর্ক, দুঃসম্পর্ক, আত্মীয়, অনাত্মীয়, শ্ত্রু মিত্র
রক্ত সম্পর্কে কেউ বা দ্বিতীয়, সৎ অসৎ, সব দূরের কাছের
বৈধ অবৈধ, হাজারও এসব সম্পর্ক ভাঙ্গে, থাকে বন্ধুত্ব
তোরা ছিলি, তোরা আছিস, জানি তোরাই থাকবি
বন্ধু বোঝে আমাকে, বন্ধু আছে আর কি লাগে?
কিছু কথা যা যায় না বলা কাউকে
কিছু কাজ যা যায় না করা সহজে
কিছু আচরন মানে না কেউ সামনে
কিছু জায়গা যায় না যাওয়া চাইলেই
সবই হয় যদি তোরা থাকিস সেখানে
বন্ধু বোঝে আমাকে, বন্ধু আছে আর কি লাগে?

 Click to Hear This Song

অপমৃত্যু

সুমন
একটা চাদর হবে অ্যালবাম

গতকাল একটা অপমৃত্যু ঘটেছিল
যা কিনা হয়নি ছাপা
দৈনিক খবরের কাগজে
পোস্টমর্টেম কখন হবে
দাফন হবে কবে
লাশটা পড়ে আছে অন্ধকারের ঘরে ।

পরিচয় খুঁজতে গিয়ে
ব্যাগটি তালাশ করে
পাওয়া যায় রক্তে লেখা
ভালবাসার চিঠি তাতে


আঘাতটা যায়নি দেখা
অন্তরে না বুকে
লাশটা পড়ে আছে অন্ধকারের ঘরে ।

সময় আর অসময়ের যুদ্ধ হয়েছিলো
পরাজয় মেনে নিয়ে
চিরতরে বিদায় নিল

জানিনা কে থাকবে হায়
আপন ঘরে সুখে
লাশটা পড়ে আছে অন্ধকারের ঘরে ।


Click to Hear This song

মঙ্গলবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে

যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে।
একলা চলো, একলা চলো, একলা চলো, একলা চলো রে॥
যদি কেউ কথা না কয়, ওরে ওরে ও অভাগা,
যদি সবাই থাকে মুখ ফিরায়ে সবাই করে ভয়—
তবে পরান খুলে
ও তুই মুখ ফুটে তোর মনের কথা একলা বলো রে॥
যদি সবাই ফিরে যায় , ওরে ওরে ও অভাগা,
যদি গহন পথে যাবার কালে কেউ ফিরে না চায়—
তবে পথের কাঁটা
ও তুই রক্তমাখা চরণতলে একলা দলো রে॥
যদি আলো না ধরে, ওরে ওরে ও অভাগা,
যদি ঝড়-বাদলে আঁধার রাতে দুয়ার দেয় ঘরে—
তবে বজ্রানলে
আপন বুকের পাঁজর জ্বালিয়ে নিয়ে একলা জ্বলো রে॥
jodi tor daak shune keu na ashe
Click To Hear This Song

সোমবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

অন্তর নামের এই যন্তর



অন্তর নামের এই যন্তর
ওরে পাগলী তোরে দেখলেই হয়ে যায় মন্থর (২)
অমাবস্যায় দেখি চাঁদেরই আলো
এই পাগলা তোরে বাসেরে ভালো
তুই ছাড়া যোগফল শুন্য
জীবনটাই অবান্তর।
অন্তর নামের এই যন্তর
ওরে পাগলী তোরে দেখলেই হয়ে যায় মন্থর (২)
কসম আকাশ আর কসম মাটি
আর সব মিছে তুই শতভাগ খাঁটি
তোর কথাতেই বাজি রাখতে পারি
এই না জীবনের প্রান্তর
অন্তর নামের এই যন্তর
ওরে পাগলী তোরে দেখলেই হয়ে যায় মন্থর (২)