বুধবার, ১০ জানুয়ারী, ২০১৮

কেউ বিশ্বাস করেনি আমাকে।



Aniket Rajesh

কেউ বিশ্বাস করেনি আমাকে।
ছোটবেলায় খেলতে ভালো লাগতো বলে
আগে আগে পড়া শেষ করে
মাঠে চলে যেতাম;
বাবা ভাবতেন পড়া ফাঁকি দিচ্ছি
অথচ ক্লাসে আমি বরাবরই প্রথম হতাম।
পাশের পাড়ার নিবারণ কাকা
সড়ক-দুর্ঘটনায় পঙ্গু বেশ ক’বছর।
মুক্তিযোদ্ধা নিবারণ কাকার মুখে তাঁর জীবনের
নানান স্মৃতিকথা শুনতে ভালো লাগতো খুব
তাই সুযোগ পেলেই তাঁর কাছে চলে যেতাম।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির বেশ কিছুদিন পর
প্রথম যেদিন বাড়ি গেলাম
কাকার জন্য তাঁরই হাতে নতুন কিছু
জামাকাপড়ের একটা প্যাকেট ধরিয়ে দেই।
সেই প্যাকেট না খুলেই কাকা বলেছিলেন
'রূপার জন্য আনলি বুঝি ? ঠিক আছে, রেখে যা।'
রূপা তাঁর কলেজ-পড়ুয়া মেয়ের নাম।
এর পর থেকে ওবাড়ি যাই নি কখনো।
হলের ডাইনিংয়ের কাজের ছেলেগুলির প্রতি
মায়া হতো খুব।
আমার ছাত্র পড়ানোর টাকা থেকে কিছুটা বাঁচিয়ে
সম্ভব হলে মাঝে-মধ্যে এটা-ওটা কিনে দিতাম;
ওদের আনন্দ দেখে কী যে ভালো লাগতো আমার!
বন্ধুরা ভাবতো ভালো খাওয়ার জন্য!
একদিন কমলাপুর স্টেশনে বেশ বয়স্ক এক ভদ্রলোক
খুব ভারী একটা ব্যাগ নিয়ে বেরুচ্ছিলেন,
আমার খালি হাত, আগ্রহ নিয়ে সাহায্য করতে গেলে
তিনি কেমন অবিশ্বাস নিয়ে তাকালেন !
কেউ বিশ্বাস করে নি আমাকে।
মানুষ ভালোবাসা বিশ্বাস করে না।
“মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারানো পাপ”
আমি পাপ পূণ্য বুঝি না,
সরল বিশ্বাস রাখি মানুষে।
মানুষের এতো অবিশ্বাস যে,
এটাও কেউ বিশ্বাস করে না।
এবার পূজোর ছুটিতে বাড়ি গিয়েছি জেনে
রূপা এসেছিলো আমাদের বাড়িতে
দেখা হতেই জিজ্ঞেস করলো
'তুমি বুঝি আমার উপর খুব রাগ করে আছো?'
বুঝলাম তিন বছর ধরে সে
এই প্রশ্নটি করার অপেক্ষায় ছিলো।
জবাবে আমি ‘না’ বলতেই সে বলেছিলো
'আমি বিশ্বাস করি না। তুমি মিথ্যে কথাটাও
ভালোভাবে বলতে শিখলে না !'
 
কেউ বিশ্বাস করেনি আমাকে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন